বারবার প্রবাসীদেরকে অপমান
বারবার প্রবাসীদেরকে অপমান
প্রবাসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যুগ যুগ ধরে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে অন্যতমভাবে সচল রেখেছে। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়ে মূলত আমরা দেশে অনুৎপাদিত জিনিস দেশের বাহির থেকে কিনে আনতে পারি। দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি, দেশের সকল অর্থনৈতিক সূচক এ ধ্বস নামলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের সূচক বলার মতো নিম্নমূখী ছিল না।
কোভিড-১৯ এর এই মহামারির সংকট কালে ও ঈদের আগে প্রবাসীদের কর্তৃক পাঠানো বৈধ রেমিটেন্স এর পরিমান ছিল ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। গত বছর একই সময় এসেছিল ১০৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ৯ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।(প্রথম আলো, ২১ মে ২০২০)।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন। এমনকি বেসরকারিভাবে দেশে যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে সেখানেও প্রবাসীদের বড় অর্থায়ন রয়েছে।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রবাসীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে গুরুত্ব দিয়ে তার নিজ দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশে ফেরত নিচ্ছে সেখানে দেশে ফিরতে গিয়ে প্রবাসীরা নানাভাবে হয়রানি হচ্ছে।
করোনা সংকটে যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে উল্টো প্রবাসীদের দোষারোপ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার যন্ত্র নষ্ট থাকলেও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রবাসীদেরকেই দোষারোপ করা হয়েছে। হজ্জ্ব ক্যাম্পে প্রবাসীদের মাঝে আক্রান্ত- অনাক্রান্ত পরীক্ষা না করেই সবাই কে এক ফ্লোরে গণরুমে রেখে তাদের জীবন হুমকিতে ফেলা হয়েছে। সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ক মিথ্যা ঢাকতে বার বার প্রবাসী ভাইদের দোষারোপ করার বিষয়টি সামনে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে মোমেন ‘প্রবাসীরা দেশে এলে চুরি চামারি বেড়ে যাবে!’, ‘নবাবজাদা’ ইত্যাদি বাজে মন্তব্য করেছিলেন। প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে সকল দেশের আইন কানুন মানতে অভ্যস্ত, বরং সরকার দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করায় দেশে সন্ত্রাস, চুরি, মাদক ব্যবসা, ঘুষ দূর্নীতি বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসায় সহজীকরণ সূচকে আজ বাংলাদেশ ১৬৮ তম কেন? বাংলাদেশে চাঁদাবাজি, দখল দারির কারনে ব্যবসায়ীরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শুধু তাই নয় প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করলে সে বিনিয়োগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লুটপাট হয়, প্রতারণার শিকার হয়। বার বার সকারের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রবাসীদেরকে ঢাল হিসাবে ব্যবহারের এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধিতা করছি।
আমরা এমন কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাই না যে প্রবাসীদের নিয়ে নবাবজাদা বকে কটূক্তি করবে, প্রবাসীদের চোর বাটপার বলবে। আমরা সরকারকে বলতে চাই আপনাদের চুরি বাটপারিতে আজ দেশের মানুষ সঠিক ভাবে ত্রাণ পায় না।
বিশ্বের এই চরম সংকটেও আমরা যখন দেশের পাশে থেকে বেসরিকারি ভাবে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ দিয়েছি, তখন আপনাদের করোনাভাইরাসের কারণে বিপদে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ টাকা দেওয়ার জন্য যে তালিকা করা হয়েছিল, তাতে প্রথম দফায় টিকেছে সাড়ে সাত লাখ হতদরিদ্রের নাম। এ ছাড়া অর্ধকোটি নামের তালিকা থেকে নানা অসংগতি থাকায় শুরুতেই ১০ লাখ নাম বাদ পড়েছে(প্রথম আলো ১৭ মে ২০২০)।
আপনাদের দলীয় নেতা কর্মীদের চাল চুরির ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। এগুলো আমাদেরকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে লজ্জিত করেছে প্রতিদিন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রবাসীদের নিয়ে করা এই কটূক্তির কারনে আমরা এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়ার জোরালো অনুরোধ জানাই। তার দ্বারা নূন্যতম কোন উপকার আমরা প্রবাসীরা পাচ্ছি না।
প্রবাসীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সহযোগীতাও লুটপাটের অনেক প্রমান আমাদের কাছে আছে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে হয়রানি এবং দালালের দৌরাত্ম ও দালালের সাথে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সখ্যতার অসংখ্য উদাহরণ আছে।