করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব আজ স্তব্ধ
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব আজ স্তব্ধ
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ব আজ স্তব্ধ।মহামারি করোনা নামক আতঙ্কে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ আজ ভীত প্রায়।এ যেন মৃত্যুর সাথে লুকোচুরি খেলা।কেউই জানেনা করোনা নামক আগ্রাসনে কাকে কখন গ্রাস করবে!! আমরা যারা মা-বাবা, স্ত্রী,সন্তান, আত্মীয় পরিজনের মায়া ত্যাগ করে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দূর প্রবাসে এসেছি তাদের মুখে হাসি ফোটানোর আশায়।এসেছি নিজের স্বপ্নকে নিজের মধ্যে কবর দিয়ে। প্রবাসে এসেছে অর্থনৈতিক মুক্তির গান শুনতে, এসেছি নিজ দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে চাঙ্গা করতে। আমরা নিজের পরিবার ও দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসাবে কাজ করি দূর প্রবাসে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। আজ করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের মত প্রবাসীদের কে চায়ের দোকানে না ঢুকতে দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়।স্ত্রী,আত্মীয় স্বজন আমাদের কে অস্বিকার করে!!!!যখন আমাদের কে নবাবজাদা বলে ব্যঙ্গ করা হয় তখন আমাদের মত প্রবাসীদের দুচোখের কোণে আবেগী কান্না জড়িত থাকে আর ভাবি আজ আমরা প্রবাসে কেনো????
তবে হ্যা সিঙ্গাপুরে আমরা যারা প্রবাসূ হিসাবে আছি তারা আজ নবাবের মতই জিবন যাপন করছি।মহামারির এই সময়ে দূরে ঠেলে দেয়নি সিঙ্গাপুর সরকার বরং এই দুঃসময়ে আপন করে বুকে টেনে নিয়েছেন এবং প্রবাসীদের সহযোগীতার জন্য তার দুই হাত উজাড় করে দিয়েছেন।করোনার এই প্রাদুর্ভাব যখন দিনে দিনে বেড়েই চলছিলো এবং আমরা সার্কিট ব্রেকারের মধ্যে যখন প্রবেশ করলাম ঠিক তখনই সিঙ্গাপুরে মানবতার মুক্তার দূত,আমাদের অন্ধকারাচ্ছনো এই সময়ে আলোর দিশারী,আমাদের অভিভাবক হিসাবে আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। লক্ষ লক্ষ প্রবাসী তথা সিঙ্গাপুরের সকল প্রবাসীদের প্রাণের স্পন্দন হয়ে আর্বিভাব করেছে সিঙ্গাপুর সরকার।আমাদের কে ভূষিত করেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদায়।সিঙ্গাপুর সরকার আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন যে সিঙ্গাপুরে আমাদের তথা প্রত্যেক প্রবাসীদের অবদান অপরিসীম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন যে প্রবাসে আমরা একা নই আমাদের পাশে আমাদের পরিবারের ছায়া হিসাবে প্রত্যেক সিঙ্গাপুরিয়ানরা রয়েছে। তিনি বলেন যে নান্দিক এই সিঙ্গাপুর গড়ার কারিগর আমরাই এবং আমাদের পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তারা যেন চিন্তা না করে একজন সিঙ্গাপুরিয়ান যেভাবে সেবা পাবে ঠিক একই ভাবে আমরাও সেবা পাবো।সিঙ্গাপুর সরকারের যেমন কথা ঠিক তেমনই কাজ প্রবাসী এক বাংলাদেশী ভাইকে প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশী টাকা ব্যয় করে তাকে সুস্থ করেছেন এবং হাজার হাজার করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশি ভাইকে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। সিঙ্গাপুর সরকার কৃতক গৃহিত কিছু ব্যবস্থা নিচে তুলে ধরলাম।
প্রবাসীদের জন্য অতিরিক্ত বাজেট প্রণয়ন।
প্রবাসীদের লেভি রেট মওকুফ।
প্রত্যেক কোম্পানিকে প্রবাসীদের নুন্যতম স্যালারি পরিষোধের নির্দেশ।
প্রবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণ।
প্রতিটি আইসেলশন ডরমেটরিতে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সহায়ক সরঞ্জাম প্রদান, এবং প্রত্যেককে ১ টি করে সিম কার্ড সাথে থাকছে ফ্রি ১০০ জিবি ইন্টারনেট ও ১০০ মিনিট টকটাইমের সুবিধা।
প্রত্যেক ডরমিটরিতে মেডিক্যাল টিম স্থাপন।
অধিকাংশ প্রবাসীকে বিনামূল্যে কোয়ারেনটাইন এ বিলাসবহুল হোটেলে রাখা হয়েছে সাথে আহার সহ অন্যান্য সুবিধা।
প্রত্যেক কোয়ারেনটাইন ব্যক্তির জন্য দৈনিক $১০০ করে প্রণদনা (শর্ত সাপেক্ষ্যে)
হসপিটালে উন্নতমানের চিকিৎসার নিশ্চয়তা।
অধিকাংশ প্রবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা উপহার।
MOM কতৃক প্রবাসীদের সার্বিক খোজ খবর রাখার নির্দেশ।
এছাড়াও ছোট বড় অনেক এনজিও সরকারের পাশাপাশি আমাদের কে সার্বিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য কিছু এনজিওর নাম তুলে ধরলাম
👉MWC
👉Health serve
👉itstrainingraincoats
👉Project dorm
👉Free food for all
👉 One bag, One book
তাছাড়া নাম না জানা আরও অনেক এনজিও।
পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও পবিত্র রমজান মাসে অনেক প্রবাসীর ইফতার সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছে।
পরিশেষে, সিঙ্গাপুরের সকল ডাক্তার, নার্সদের বিশেষ ও আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই।করোনা আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ্য করতে নিঃস্বার্থ ও নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রোগীদের কে এড়িয়ে না যেয়ে প্রকৃত অর্থে সেবা এবং মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়ে তাদের কে সুস্থ্য করে তুলছেন। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য করাচ্ছেন নিয়মিত ব্যায়ম।নিজের পরিবারের সদস্যদের মতই সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন প্রবাসী বলে একটুও ঘৃণার চোখে দেখছেন না।
পরিশেষে বলব আমি সিঙ্গাপুরে একজন প্রবাসী হিসাবে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি। করোনা আমাকে আপন করে আক্রান্ত করেছে কিন্তু আমার মানসিক ও ইচ্ছা শক্তিকে কাবু করতে পারেনি।মহান আল্লাহতালা আমাকে যদি সুস্থ্য করে আবার আমার কর্মা ফেরার তৌফিক দেয়, তাহলে আবার সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একজন প্রবাসী হিসাবে প্রাণপন লড়ে যাবো।
সিঙ্গাপুর সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলে যারা আমাদের কে আপন করে নিয়েছেন তাদের কে সকল প্রবাসীর পক্ষ্য থেকে তথা আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অশ্রুসিক্ত নয়নে আজ আমি নবাবজাদা সত্যিই আমি নবাবজাদা।
*ইহা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত কেউ কোন আঘাত পেলে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।